নির্বাচনের আগে গণহত্যার বিচার করতে হবে, তারপর অন্য কাজ। ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার। আমরা আমাদের এ দেশে মেজরিটি মাইনরিটি একেবারেই মানিনা। বাংলাদেশে যারাই জন্মনিয়েছে তারা এদেশের মর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক। শনিবার (৮ ফ্রেব্রুয়ারী) কক্সবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামীর বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
জেলা জমায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে ককসবাজার সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ডাঃ শফিকুর রহমান আরো বলেন, সমাজের মধ্যে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়েছিলো। এখানে মেজরিটি মাইনরিটি বলে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মের ভাই বোনদের প্রতি নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের সম্পদ গ্রাস করা হয়েছে, জায়গা জমি দখল করা হয়েছে, ইজ্জতের উপর হাত দেয়া হয়েছিলো। অনেকের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর দোষ দেয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর উপর।

স্বাধীনতার ৫৪ বছরে জামায়াতের কর্মীরা এসব অপকর্ম করেছে তার প্রমাণ থাকলে তা সুস্পষ্ট করে নাম ঠিকানা দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন। আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, ন্যায় বিচার আমরা আপনাদের হাতে তুলে দেবো।
২৪ এর অভ্যুত্থানকারী প্রজন্মকে সম্মান জানিয়ে আমীর জামায়াত বলেন, তোমাদের নেতৃত্বে আমরা ছিলাম। সাড়ে ১৫ বছর আমরা আমাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি। কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। এটাই সত্য কথা। কিন্তু সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিকতায় তোমাদের নেতৃত্বে জাতি শেষ আঘাতটা ফ্যাসিজমের উপর দিয়েছিলো এবং তাতে সফল হয়েছে।
আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেকে আবার নিজেরা কৃতিত্ব দাবী করে৷ আমি মাস্টারমাইন্ড, অমুক ভাই মাস্টারমাইন্ড তমুক নেতা মাস্টারমাইন্ড। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড আমরা বিশ্বাস করিনা। মহা পরিকল্পনাকারী মহান রাব্বুল আলামিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে।
আমীরে জামায়াত আরো বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর অল্প সময়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো, সেটা ছিলো আমাদের আশা। কিন্তু বাস্তবে সে আশা পূরণ হয়নি। যদি বলি একেবারেই পূরণ হয়নি, তাহলে কথাটা সত্য হবেনা। কিন্তু পূরণ হবার বিশাল প্রত্যাশা মানুষের ছিলো। একটা স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা আমরা এখনো পেলাম না।
আইনের অঙ্গনে এসে যারা বেআইনী কর্মকাণ্ড করেছেন, প্রধান বিচারপতির দরজায় এসে লাথি দিয়েছিলো, আওয়ামীলীগ তাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বানিয়েছিলেন। এদের কাছ থেকে বিচার পাওয়া যাবেনা এটাই স্বাভাবিক। তাই অবিচারের শিকার হয়ে আমাদের ১১ জন কলিজার টুকরা শীর্ষ নেতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনা, তবে আমরা অবশ্যই অপকর্মের বিচার চাই। আমাদের কথা স্পষ্ট। সবগুলো খুনের বিচার হতে হবে। বিশেষ করে ২৪ এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। আগে বিচার তারপর অন্য কাজ। এ বিচার না হলে শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে।
তিনি পুলিশ বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পুলিশ ভাইদের বলছি বেনজিরের ফাঁদে পা দিবেন না।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ও দাবি তুলেন।দীর্ঘ দিন ধরে আটক জামায়াত নেতা এটি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করে তিনি আরাে বলেন, গত আওয়ামী সরকারের আমলে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সমস্ত অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়, নিবন্ধন বাতিল, প্রতীক বাতিল করে সর্বশেষ দলকে নিষিদ্ধ করেছিল। আল্লাহর অসীম রহমতে ৫ আগষ্ট তারাই নিষিদ্ধ হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এটাই আল্লাহর বিচার।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-
কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আজাদ, সহকারী সেক্রেটারী মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, অঞ্চল টিম সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক মন্জু।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী জাহেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন-জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মুফতি হাবিবুল্লাহ, এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারী ও কর্ম পরিষদ সদস্য এডভোকেট শাহ জালাল চৌধুরী, এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শামসুল আলম বাহাদুর, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমীর আব্দুল্লাহ আল ফারুক, কক্সবাজার জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আব্দুর রহিম নুরী ও সাবেক পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল প্রমূখ।