২০ বছর পরেও বারী ভাই ভাইরাল!


hudhudbd.com
রাকিব হাসান
প্রকাশিত: ২৩ মে, ২০২৫

বারী ভাইয়ের মানসিক চিকিৎসা দরকার—এ কথা অনেকে অনেকবার বলেছে। কেউ মজা করে, কেউ বিরক্ত হয়ে, কিংবা  কেউ কেউ  সত্যিই সহানুভূতি নিয়ে। তবে চবির ৫ম সমাবর্তনের সময়ে তাকে আবার ভাইরাল হতে দেখে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন না করে পারলাম না। ২০০৫ সালের কথা। ক্যাম্পাস তখন অন্য রকম এক উত্তাপে ফুটছে। কোনো এক বিকেলে ক্যাম্পাসের এক ছোট বোন গম্ভীর মুখে জানাল, “একজন প্রতিদিন আমাকে বিরক্ত করছে। বাজার করলে বিল দিয়ে দেয়, ঝুপড়িতে আমার ফ্রেন্ডদের সঙ্গে গিয়ে বসে, তারা কিছু খেলেও বিল দিয়ে দেয়, সারাক্ষণ পেছনে পেছনে ঘুরে।”তাকে যেন ‘সেভ’ করার দায়িত্ব নেই। দেরী না করে কয়েকজন জুনিয়রকে সঙ্গে নিয়ে ছুটলাম ঝুপড়ির দিকে। উদ্দেশ্য, ধমক দিয়ে ব্যাপারটা চুকিয়ে দেয়া। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি জুব্বা-টুপি পরা ‘হুজুর’ টাইপের একজন বসে আছেন।প্রথম প্রশ্ন করি—“এইরকম লেবাস পড়ে একটা মেয়েকে বিরক্ত করতে লজ্জা করে না?”তার জবাব এখনো কানে বাজে—“লেবাস দিয়ে প্রেমিককে মূল্যায়ন করা উচিত না। আমারও প্রেমিক মন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রদের মতো আমারও  প্রেমে পড়ার অধিকার আছে।”খোঁজ নিয়ে জানি, ইকোনমিক্সের ফার্স্ট বয়। যুক্তি-তর্কে ঠাসা, কিন্তু আচরণে নিরীহ। ধমক দিয়ে লাভ নেই-বরং মানুষটা কৌতূহলোদ্দীপক। সিদ্ধান্ত নেই, তাকে নিয়ে ফিচার লিখব। সেই প্রথম, ২০০৫ সালে “আমার ক্যাম্পাস” পত্রিকায় বারী ভাইকে নিয়ে ফিচার প্রকাশিত হয়। তখন ফেসবুক ছিল না, কিন্তু ফিচারটি মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এতটাই জনপ্রিয় হয় যে বারী ভাই ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ হয়ে উঠে (ভাইরাল)। সেসময় তার সামনে গিয়ে ঐ মেয়েটির প্রশংসা করলেই যেকোন শিক্ষার্থীকে চা-নাস্তা ফ্রি খাওয়াতেন তিনি! পরের ঘটনা আরও অদ্ভুত। এক শীতের রাতে, সাহরীর সময়, খালেদা জিয়া হল থেকে ফোন আসে—“বারী ভাইয়ের পাগলামির হাত থেকে আমাদের বাঁচান।” রাত সাড়ে চারটায় কয়েকজনকে নিয়ে ছুটে যাই। দেখি, হলের দু’তলার জানালার ঠিক বরাবর সামনের মাঠে একটি লেবু গাছের নিচে বারী ভাই বসে আছেন। কাঁপছেন শীতে, চোখ যেন জানালার দিকে স্থির। মাঝে মধ্যে হাত নাড়ছেন-যেন কোনো সাড়া খুঁজছেন।মেয়েদের  কেউ কেউ ভেবেইনিছে  ভূত বলে।কেউবা  তাকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ছে পানির বোতল আর কেউ ছেঁড়া জুতা। আর বারী ভাই সেই লেবু গাছতলা থেকে উঠে গিয়ে ( ক্যাচ) ধরার চেষ্টা করছেন। অবিশ্বাস্য দৃশ্য! জুনিয়রদেরকে বললাম, “বারী ভাইকে শামসুচ্ছন্নাহারের ঝুপড়িতে ধরে নিয়েএসো।” তারা কোলে করে তাকে নিয়ে এল। বললাম, “আপনার মতো মেধাবী মানুষকে এই পাগলামি মানায়! চলুন।”তিনি পকেট থেকে এক শিশি ইঁদুরের ঔষুধ বের করে বললেন, “আমাকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে এখনই খেয়ে ফেলব। আর মরে গেলে এই লেবু গাছের নিচেই কবর দিও- যেন কবর থেকে জানালাটা বরাবর তাকে (—) দেখতে পাই।” তার নাটকীয় সংলাপে আমরা থেমে গেলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম, সে রাতে আর কিছুই বলা হয়নি। তবে পরদিন ক্যাম্পাস পত্রিকায় লিখলাম ফিচার: “খালেদা জিয়া হলের সামনে কবর”। ফিচারটি ভাইরাল হলেও এক চরম ভুল হয়ে যায়। সেই ছোট বোনের ছদ্মনাম না দিয়ে বেখিয়ালে  আসল নামই ছাপা হয়ে যায়। সম্পাদক মুসলিম আজাদকে বলেছিলাম নাম যেন না আসে। ততক্ষণে পত্রিকার প্রিন্ট কপি বেরিয়ে যায়।ছোট বোনটি ভীষণ বিব্রত হয়, ভেঙে পড়ে কান্নায়। কি আর করা, ভুল হয়ে গিয়েছিল। উপকার করতে গিয়ে বিপদে ঠেলে দিলাম মনে হওয়ায় নিজেরই খারাপ লাগলো। কারণ এরপর ক্যাম্পাসে ‘বারী ভাই’ নামটি আর একক থাকেনি।  সাথে  মেয়েটির নামও উচ্চারিত হওয়া শুরুে করে। এক ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে দুষ্টু পুলাপাইন শামসুন্নাহার হল থেকে খালেদা জিয়া হলের দিকে উপরে উঠার রাস্তায় সাদা রং দিয়ে লিখে দেয় “বারী  চত্বর”। এরপর বারী  ভাই  হয়ে উঠেন আরো দুর্দমনীয় । মেয়েটি বিবাহিত জানার পরেও পিছু নেওয়া বন্ধ হয়নি তার। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম এ বিষয়ে  আর কিছুই লিখব না। কিন্তু আমার  ক্যাম্পাস পত্রিকা ছাপতে থাকে তার একের পর এক প্রেমবিষয়ক  সাক্ষাৎকার। এতে বারী ভাই হয়ে ওঠেন এই পত্রিকার —‘হট কেক’। সময় বদলে গেছে। পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ২০ বছর। কিন্তু বারী ভাইয়ের গল্প যেন এখনো থমকে আছে সেই লেবু গাছটার ছায়ায়। তাইতো তিনি এখনো  ভবঘুরে। ক্যাম্পাসের সর্বত্রে যেস লক্ষ্যহীন পথচলা। অনেকে চবির ৫ম সমাবর্তনে তাকে নিয়ে বানিয়েছে ভিডিও।, যদিও এসব  আংশিক সত্য। কারণ তার প্রেম ছিলো এক তরফা।সত্য কথা হলো কেউ তার প্রেমে পড়েনি।

বারী ভাইয়ের ভালো চাই। তাই চবি থেকে তার একের পর এক ডিগ্রি নেয়া থেকে তাকে  বিরত করে তার মানসিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া প্রশাসনের উচিত বলে মনে করি।

শেয়ার করুন

Facebook Twitter Whatsapp

বিজ্ঞাপন
ফেসবুকে বাংলা চ্যানেল
এ সম্পর্কিত আরও খবর

নিউজ কর্নার
Banglachannel বাংলা চ্যানেল

সম্পাদক : সাইফুল্লাহ মুসলিম
বিএ টাওয়ার ৫ম তলা, দেওয়ানহাট
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ।

বাংলা চ্যানেল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত