বাঘ, সাধু ও ছাগলের গল্প বনাম ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর


hudhudbd.com
বাংলা চ্যানেল
প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

প্রফেসর ড. আ ক ম আব্দুল কাদের
আমরা যখন মাদ্রাসায় জামায়াতে দাহুমে পড়ি তখন ইরানের প্রখ্যাত কবি শেখ সাদীর ‘কারীমা’ নামক একখানা ফার্সী কিতাব পড়ানো হতো। আমরা এই কিতাবের অনেকগুলো কবিতা মুখস্থ করলেও তখন এর আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারিনি। ফাজিল পরীক্ষা সম্পন্ন করে মাসিক দশ টাকা বেতনে একটি কাওমী মাদ্রাসায় শিক্ষকতার সুবাদে মূলত শেখ সাদীর রচনাকর্মেের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করি। এই সময়ে তাঁর গুলিস্তাঁ ও বুস্তাঁ গ্রন্থ দু’খানির উল্লেখযোগ্য অংশ পড়ার চেষ্টা করি এবং তা হতে বেশ কিছু কবিতা মুখস্থ করি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর শেখ সাদীর কবিতা নিয়ে ১৯৯২ সালে “শেখ সাদী ও তাঁর কাব্য প্রতিভা” শীর্ষক একটি গবেষণা প্রবন্ধ রচনা করি এবং একটি একাডেমিক সেমিনারে সেটি উপস্থাপন করি, যা পরবর্তীতে একটি গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধ রচনা করতে গিয়ে আমি শেখ সাদীর রচনাকর্ম গভীরভাবে অধ্যয়নের সুযোগ পাই। এই সময়ে আমি গুলিস্তাঁ গ্রন্থের باب دوم در اخلاق درویشاں শীর্ষক অধ্যায়ে একটি গল্প পড়েছিলাম যা তিনি কাব্য রূপে বর্ণনা করেছেন। সেটি হলো:
شنیدم گوسپندی را بزرگی
رهانید از دهان و دست گرگی
شبانگه کارد در حلقش بمالید
روان گوسپند از وی بنالید
که از چنگال گرگم در ربودی
چو دیدم عاقبت خود گرگ بودی
অনুবাদ:
একদা বাঘের করে পড়েছিল পথহারা ছাগ
উদ্ধারি আনিল তারে বৃদ্ধ এক সাধু মহাভাগ।
সাঁঝের আঁধারে যবে ঢেকে গেল দিবসের আলা,
অস্ত্রহানি কন্ঠে তার সাধু খেলে ঘাতকের পালা।
মুমূর্ষু পরাণে ছাগ কাঁদি কয় চোখে লয়ে পানি,
বৃক হতে উদ্ধারিয়া বৃক তব সাজিলা আপনি।
এর সারকথা হলো, একবার একটি ছাগল বাঘের শিকারে পরিণত হলো। এক সাধক এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দৃশ্য অবলোকন করেন। তিনি নিজের তপস্যাবলে ছাগলটিকে বাঘের কবল থেকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। অতঃপর ছুরি নিয়ে সেটি যবেহ করার আয়োজন করেন। এমতাবস্থায় প্রাণ ওষ্ঠাগত ছাগলটি কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো, বাঘের কবল থেকে মুক্ত করে আপনি নিজেই আবার হিংস্র বাঘের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন।
গত কয়েকদিন আগে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় ভয়ংকর নভেম্বর শিরোনাম দিয়ে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের ভয়াবহ প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশব্যাপী হৈ চৈ ফেলে দেয় এবং এইসব ব্যাংকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আমার মধ্যেও এই প্রতিবেদন কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারী- বেসরকারী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোতে আমার অনেক আত্মীয় এবং অসংখ্য ছাত্র, শিষ্য ও শুভানুধ্যায়ী উচ্চতর পদে কর্মরত থাকার সুবাদে এইসব ব্যাংকে কিছু কিছু অনিয়মের খবর সবসময়ই আমার কানে আসতে থাকে। কিন্তু কখনোই আতঙ্কিত কিংবা বিচলিত হইনি। পরিশেষে পত্রিকার এই প্রতিবেদটি আমার মধ্যেও আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে।
গত কয়েকদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ইকোনমিক জোন উদ্বোধনকালে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিগণ অংশগ্রহণ করেন। সেখানে দুইজন শিল্পপতি ইসলামী ব্যাংক নিয়ে পারস্পরিক আলোচনার কয়েকদিন পর এই প্রতিবেদন বিশেষ কোন পরিকল্পনার অংশ কী না তা আমাকে গভীর চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংক ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ইসলামী ঘরানার লোকদের উস্কে দিয়ে এটি সাধুবাবা সেজে বাঘের হাত থেকে উদ্ধার করে বিশেষ কোন মহল ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয় বানানোর কোন মিশন নয় তো?
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরসহ দেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনীতিবিদ ইসলামী ব্যাংকসমূহের মালিকানা পরিবর্তন সঠিক হয়নি বলে মত প্রকাশ করেছেন। যদিও মৌলবাদী অর্থনীতির প্রবক্তাগণ এই ইস্যুতে এখনো নিশ্চুপ। দেশের অধিকাংশ চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ ও মূলধারার অর্থনীতিবিদদের মতে- ইসলামী ব্যাংক সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে এই পর্যায়ে উপনীত হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো কিছু সংখ্যক নিবেদিতপ্রাণ সৎ, যোগ্য ও নিঃস্বার্থ মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দেশের লক্ষ কোটি মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন। বর্তমান অবস্থায় ইসলামপন্থী মানুষের প্রতিবাদকে পুঁজি করে এটি কোন সাধুবাবা যেন হাত বদল করতে না পারে এবং দেশ ও জনগণের স্বার্থে যেন এটি সততার মানদণ্ডে উন্নীত ব্যাক্তিবর্গেের হাতে ন্যস্ত করা হয়, অযুত কন্ঠে এই আওয়াজ তুললে হয়ত এই ক্ষেত্রে কিছুটা কাজে আসতে পারে।

শেয়ার করুন

Facebook Twitter Whatsapp

বিজ্ঞাপন
ফেসবুকে বাংলা চ্যানেল
এ সম্পর্কিত আরও খবর

নিউজ কর্নার
Banglachannel বাংলা চ্যানেল

সম্পাদক : সাইফুল্লাহ মুসলিম
বিএ টাওয়ার ৫ম তলা, দেওয়ানহাট
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ।

বাংলা চ্যানেল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত