ছিনতাইয়ের সাথে আমরা সবাই কোন না কোন ভাবে অল্প বিস্তর পরিচিত। আমি কয়েকবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে এই বিদ্যা কিছুটা রপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এই বিদ্যার উপর ভর করে কখনো কখনো আত্মরক্ষা করতে পেরেছি, আবার কখনো কখনো অন্যদেরকেও রক্ষা করে অপরিচিত লোকজনের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। এই বিষয়ে আমি ইতোপূর্বে দুইটি পোস্ট দিয়ে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। ছিনতাইয়ের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্থান, সময় এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা। যদি কোন ছিনতাইকারী এই তিনটি বিষয়ের কোন একটিতে ভুল করে তা হলে তাকে অবশ্যই প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।
গত কিছুদিন আগের কথা। উত্তরাতে একটি প্রোগ্রাম শেষ করে আমি চট্টগ্রাম আসার জন্য বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে রাতের তূর্ণা নিশিথা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। ট্রেন রাত বারোটার দিকে আসবে। আমি মানসিকভাবে চিন্তামুক্ত থাকার জন্য এগারোটার সময় চলে আসি। প্রথম শ্রেণীর যাত্রী। কিন্তু এই শ্রেণীর ওয়েটিং রুমটি অবস্থানের অনুপোযোগী হওয়ার কারণে ফ্ল্যাটফর্মে বসে সময় পার করছি, আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের কথোপকথন, জীবনযাত্রার মান ইত্যাদি গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করছি। কোন ট্রেন আগমনের ঘোষণা আসার সাথে সাথে সেই ট্রেনের যাত্রীদের হুমড়ি খেয়ে পড়ার দৃশ্য সত্যিই উপভোগ করার মত। আর এই ঠেলাঠেলির প্রতিযোগিতায় কেউ কেউ পকেটমারের পাল্লায় পড়ে আক্ষেপ করার ঘটনাও চোখে পড়লো। ইতোমধ্যে দেখলাম, উত্তরবঙ্গের একটি ট্রেন এসে কেবল ফ্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছে। তিন চার মিনিট এখানে অপেক্ষা করবে। একজন যাত্রী জানালার পাশে বসে মোবাইল টিপাটিপি করছে। ট্রেন এসে দাঁড়ানোর দশ সেকেন্ডের মধ্যেই হঠাৎ যাত্রীবেশী পনের বিশ বছর বয়সের একজন তার মোবাইলটি ছোঁ মেরে টান দিয়ে দিল ভো দৌড়। ট্রেনের যাত্রী ভদ্রলোক চোর চোর বলে ভীষণ চিৎকার শুরু করলো। তার চিৎকার শুনে অপেক্ষমান যাত্রীরাও ছিনতাইকারীর পিছু নিয়ে তাকে ধরে ফেললো। ইতোমধ্যে মোবাইলের মালিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে তার মোবাইলটি উদ্ধার করলো। তারপর চললো গণপিটুনি। যে যেইভাবে পারছে বেদম প্রহার করে নিজেদের মনের ঝাল মেটাচ্ছে। কিন্তু ছিনতাইকারী বেচারা নির্বিকার। মুখে কোন আওয়াজ নেই, চোখে কোন পানি নেই। মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি। একটু পরে ট্রেন ছাড়ার জন্য হুইসেল বেজে উঠলো। মোবাইলের মালিক দৌড়ে ট্রেনে উঠে পড়লো। আর ছিনতাইকারী বেচারা রণে ভঙ্গ দিয়ে সেদিনের মত কেটে পড়লো। আমি চিন্তা করলাম, যদি ছিনতাইকারী মিনিট দুয়েক অপেক্ষা করতো তাহলে হয়ত সে তার মিশনে সফল হতো।