মা‘যূর ব্যক্তির পেছনে ইক্তিদা শুদ্ধ হবে কি?


hudhudbd.com
বাংলা চ্যানেল
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল, ২০২১

মাটিতে বসে যথানিয়মে সাজদা করতে সমর্থ নন- এমন মা‘যূর ব্যক্তির ইমামত এবং এরূপ ইমামের পেছনে ইক্তিদা শুদ্ধ হবে কি?
এ প্রসঙ্গে আমার অধ্যয়নের সংক্ষিপ্তসার হলো:
ক. মুজতাহিদ ইমামগণের মতামত
প্রথমত, ইমামতের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ শর্ত হলো- ইমাম সালাতের সবকটি রুকন যথানিয়মে আদায় করতে সক্ষম হবেন, যদি তাঁর মুক্তাদীগণ সুস্থ-সক্ষম হন। কাজেই যে ব্যক্তি ইশারা-ইঙ্গিতে রুকূ করেন কিংবা সাজদা করেন, তার জন্য সুস্থ-সক্ষম লোকদের ইমামতি করা সহীহ হবে না। (শাফি‘ঈগণ ব্যতীত) সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকীহগণ (হানাফী, মালিকী ও হাম্বালীগণ) এ মত পোষণ করেন। যদি মুক্তাদীদের মধ্যে ইমামতের উপযুক্ত সুস্থ-সক্ষম কেউ না থাকেন, তা হলে ভিন্ন কথা।
দ্বিতীয়ত, বসে বসে সালাত আদায় করেন-এরূপ ব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন-এরূপ ব্যক্তিদের ইমামতি করা শুদ্ধ হবে কি না? এ বিষয়ে ইমামগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
[উল্লেখ্য যে, এ মাসআলায় বসে সালাত আদায়কারী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- যিনি যথানিয়মে রুকূ ও সাজদা করেন। তবে যিনি ইশারা-ইঙ্গিতে রুকূ সাজদা করেন- তার পেছনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের ইক্তিদা সহীহ হবে না। এ ব্যাপারে জুমহুর ফকীহগণ ঐকমত্য পোষণ করেন।]
ইমামগণের মতপার্থক্য:
 মালিকী ও হাম্বলী ফকীহগণের সাধারণ মতানুসারে বসে বসে সালাত আদায় করেন-এরূপ ব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন-এরূপ ব্যক্তিদের ইমামতি করা জায়িয হবে না। কারণ, এ অবস্থায় সক্ষম ব্যক্তির সালাতের ভিত রচিত হচ্ছে দুর্বল ব্যক্তির সালাতের ওপর। হানাফীগণের মধ্যে ইমাম মুহাম্মদ (রাহ.)ও এরূপ মত পোষণ করেন। এ মর্মে একটি হাদীসও পাওয়াও যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, لا يؤمنّ أحد بعدي جالساً -‘‘আমার পরে কেউ যেন কখনো বসে বসে ইমামতি না করে।” (সহীহ ইবনি হিব্বান; তবে হাদীসটি সূত্রগত দিক থেকে দুর্বল।)
 হাম্বলী ফকীহগণ একটি অবস্থাকে এর ব্যতিক্রম বলেছেন। অবস্থাটি হলো: মসজিদের ইমাম যদি নির্ধারিত থাকেন (অর্থাৎ إمام الحي হন) এবং অসুস্থতা থেকে তাঁর নিরাময় লাভের আশু আশা থাকে, তবেই একান্ত অসুস্থতার সময় সাময়িকভাবে তিনি বসে বসে ইমামতি করলে জায়িয হবে। তবে উত্তম হলো, যদি তিনি দাঁড়াতে না পারেন, তবে তিনি ইমামতের জন্য তাঁর খলীফা (প্রতিনিধি) নিয়োগ করবেন।
আর যদি ইমাম মহল্লার নির্ধারিত ইমাম (إمام الحي) না হন, তাহলে তিনি বসে বসে ইমামতি করবেন না; বরং তিনি এমন কোনো সুস্থ-সক্ষম ব্যক্তিকে ইমামতির জন্য তালাশ করবেন, যিনি দাঁড়িয়ে ইমামতি করতে পারেন।
বর্তমানে সালাফীগণের মধ্যে কেউ কেউ (যেমন- শায়খ উছাইমীন রাহ.) এ প্রসঙ্গে إمام الحي -এর শর্তরোপ করতে চান না। তাঁরা মনে করেন যে, সুস্থ-সক্ষম মুক্তাদীদের মধ্যে ভালো কিরাআত পড়তে জানেন- এরূপ কেউ না থাকলে অক্ষম ইমাম- যিনি দাঁড়াতে পারেন না- বসে বসে ইমামতি করতে পারবেন।
 হানাফীগণের মধ্যে ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আবূ ইউসূফ (রা.) প্রমুখের মতে, বসে বসে সালাত আদায় করেন-এরূপ ব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন-এরূপ ব্যক্তিদের ইমামতি করা জায়িয। শাফি‘ঈ ইমামগণও এ মত পোষণ করেন। তাঁদের দলীল হলো- বিশুদ্ধতম মতানুসারে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর অন্তিম কালে অসুস্থ অবস্থায় কয়েক ওয়াক্ত সালাত বসেই আদায় করেছেন আর সাহাবীগণ পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায় তাঁর ইক্তিদা করেছিলেন।
খ. উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে যা বোঝা যায়:
১. যে ব্যক্তি- বসে হোক বা দাঁড়িয়ে- ইশারা-ইঙ্গিতে রুকূ করেন কিংবা সাজদা করেন, তার জন্য সুস্থ-সক্ষম লোকদের ইমামতি করা সহীহ হবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকীহগণ এ ব্যাপারে একমত।
২. বসে সালাত আদায় করেন-এরূপ ব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন-এরূপ ব্যক্তিদের ইমামতের প্রসঙ্গটি ভীষণ বিতর্কিত। মালিকীগণের মতে, তা না-জায়িয; হাম্বলীগণের মতে, মসজিদের নির্ধারিত ইমামের জন্য সাময়িকভাবে জায়িয; শাফি‘ঈগণের মতে, জায়িয; হানাফীগণের মতপার্থক্য রয়েছে; আধুনিক সালাফীদের মধ্যে কারো কারো মতেও তা জায়িয, যদি মুক্তাদীদের মধ্যে ভালো কিরাআত পারেন- এমন কেউ না থাকে।
৩. কোনো কোনো ফকীহের মতে, যদিও বসে বসে সালাত আদায় করেন-এরূপ ব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীদের ইমামত জায়িয; তবে সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, এটা অবশ্যই উত্তম ব্যবস্থা নয়।
৪. ফিকহের একটি মূলনীতি হলো, যেসব বিষয়ে মুজতাহিদ ইমামগণের মধ্যে জায়িয ও নাজায়িয হবার ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে- সেসব বিষয় সতর্কতামূলক পরিহার করা। কাজেই এ মূলনীতি অনুসারে বলা যায় যে, বসে বসে সালাত আদায়কারীর জন্য দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীদের ইমামত করা সমীচীন নয়। এটিই সতকর্তার দাবি।
গ. অভিমত
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীতি হতে পারি যে,
১. যিনি মাটিতে বসে যথানিয়মে সাজদা করতে সমর্থ নন-এমন মা‘যূর ব্যক্তির ইমামত এবং এরূপ ব্যক্তির পেছনে ইক্তিদা শুদ্ধ হবে না।
২. বসে বসে সালাত আদায় করেন- এরূপ ব্যক্তির দাঁড়িয়ে সালাতকারীদের ইমামত যদিও কারো কারো মতে জায়িয; তবে কেউ তা উত্তম বলেননি। এমনকি হাম্বলীগণের মতে, এরূপ অবস্থায় নির্ধারিত ইমামের জন্য মুস্তাহাব হলো, তিনি ইমামতের জন্য তাঁর কোনো খলীফা নিয়োগ করবেন।
৩. যিনি চেয়ারে বসে সালাত আদায় করেন (যদি ধরেও নিই যে, একান্ত অপারগ ব্যক্তির জন্য তা ক্ষেত্রবিশেষে জায়িয), তিনি যেহেতু মাটিতে বসে যথানিয়মে সাজদা করতে সক্ষম নন, তাই এরূপ ব্যক্তির ইমামত শুদ্ধ হবে না। বরং তিনি মুক্তাদীদের মধ্যে এমন কোনো সুস্থ-সক্ষম ব্যক্তিকে ইমামতির জন্য তালাশ করবেন, যিনি দাঁড়িয়ে ইমামতি করতে পারেন এবং মাটিতে বসে যথানিয়মে সাজদা আদায় করতে পারেন।
৪. চেয়ারে বসে সালাত আদায় করার প্রসঙ্গে সম্প্রতি আমার ‘নামাযে চেয়ারের ব্যবহার’ বিষয়ক একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহী পাঠকগণ তা পাঠ করতে পারেন। সাধারণভাবে আমি মনে করি, চেয়ারে বসে সালাত আদায় করা এবং এ অবস্থায় ইমামতি করা বিধেয় নয়।
هذا ما عندي، إن كان صوابا فمن الله ، وإن كان خطأ فمني ومن الشيطان.

শেয়ার করুন

Facebook Twitter Whatsapp

বিজ্ঞাপন
ফেসবুকে বাংলা চ্যানেল
এ সম্পর্কিত আরও খবর

ওয়ায়িজের সম্মানী বনাম পারিশ্রমিক !!

  • ২৪ এপ্রিল, ২০২১
  • বাংলা চ্যানেল

নিউজ কর্নার
Banglachannel বাংলা চ্যানেল

সম্পাদক : সাইফুল্লাহ মুসলিম
বিএ টাওয়ার ৫ম তলা, দেওয়ানহাট
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ।

বাংলা চ্যানেল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত