প্রফেসর ড. আহমদ আলী
বিশিষ্ট তাবি‘ঈ শা‘বী (রাহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার সাহাবী আলকামাহ (রা.)-এর সাথে আমার সাক্ষাত হয়। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো, এ উম্মতের মধ্যে আলী (রা.)-এর দৃষ্টান্ত কীরূপ? শা‘বী (রাহ.) জবাব দিলেন, না, আমি জানি না, আপনি বলুন, তাঁর দৃষ্টান্ত কী? তিনি বললেন,
مثل عيسى بن مريم أحبه قوم حتى هلكوا في حبه وأبغضه قوم حتى هلكوا في بغضه.
‘‘তাঁর দৃষ্টান্ত হলো সাইয়িদুনা ঈসা (আ.)। ঈসা (আ.)কে একদল লোক ভালোবাসতে গিয়ে (অতিরঞ্জন করে) ধ্বংস হয়েছে, আর একদল লোক তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে ধ্বংস হয়েছে।” (আহমদ, ফাদা’য়িলুস সাহাবাহ; হাদীসটি কেউ কেউ মারফূ‘রূপে বর্ণনা করেছেন; তবে তা সঠিক নয়।)
উম্মতের মধ্যে অতিরঞ্জনকারী দলটি হচ্ছে শী‘আ। এরা সাইয়িদুনা আলী (রা.) ও আহলে বায়তকে নিয়ে অতিরঞ্জন করে। এদের কেউ সাইয়িদুনা আলী (রা.)কে আল্লাহ তা‘আলার অবতার বা মানবেশ্বর, আর অধিকাংশই তাঁকে ও তাঁর বংশের বিশিষ্ট কয়েকজনকে আল্লাহর খলীফা, আল্লাহর নূর, (নবী-রাসূলগণের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বা সমমর্যাদাসম্পন্ন) ইমাম, মা‘সূম, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যাহিরী ও বাতিনী খলীফা, গায়বী ইলমের অধিকারী প্রভৃতিরূপে বিশ্বাস করে থাকে।
আর বিদ্বেষ পোষণকারী দলটি হচ্ছে নাসিবী। শীআদের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ এদের উদ্ভব ঘটে। এরা উমাইয়া রাজপরিবারের কট্টর সমর্থক ছিল। তারা আহলে বায়তের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে ও তাঁদের সমালোচনা করে।
উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি আমাদের ঈমানের একটি দাবি হলো, আমরা তাঁর সাথে সম্পর্কিত আহলে বায়তকে ভালোবাসবো এবং কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা অনুসারে তাঁদের প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের প্রতি লক্ষ্য রাখবো। এ ক্ষেত্রে কুরআন ও বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহের অতিরিক্ত যে কোনো অতিরঞ্জন যেমন কাম্য নয়, তেমনি তাঁদের প্রতি কাঙ্ক্ষিত সম্মান প্রদর্শনে কোনোরূপ কসূর করাও কাম্য নয়। দুটিই চরম নিন্দনীয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও তাঁর প্রশংসার ব্যাপারে কোনোরূপ অতিরঞ্জন করতে নিষেধ করেছেন। তিনি উম্মতকে সতর্ক করে বলেছেন,
لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ.
‘‘তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন খ্রিস্টানরা মারইয়াম তনয় ঈসা (আ.)-এর প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে। জেনে রেখো, আমি হলাম কেবল তাঁর বান্দাহ। তোমরা আমার পরিচয় দিতে গিয়ে বলবে: আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।” (সহীহুল বুখারী)
আর উম্মত যাতে আহলে বায়তের শানে কোনোরূপ কসূর না করে, তাই রাসূল সা. তাঁদের অমর্যাদা করার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করার জন্য বারংবার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
أذكركم الله في أهل بيتي۔
“আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বায়তের ব্যাপারে আল্লাহর কথা মনে রাখতে উপদেশ দিচ্ছি। ” (সহীহ মুসলিম)
[আহলে বায়ত প্রসঙ্গে অতিরঞ্জন ও কসূর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন, আমার বিদআত ২য় খণ্ড, ১০ম অধ্যায়।]